
টপস রফতানিতে আয় ৩৬৫ কোটি ডলার
সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে টপস রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৬৫ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) ৩৯ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। পোশাকের মোট রফতানিতে এ পণ্যের অবস্থান চতুর্থ স্থানে।
পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরার ফ্যাশন ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। শুধু ফ্যাশনই ছড়াচ্ছে না, এসব পোশাক তৈরিও হচ্ছে আমাদের মতো প্রাচ্যের দেশগুলোতে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বাজার ধরতে নানা ডিজাইনের টপ তৈরি করছেন। পৃথিবীর সব দেশেই বাংলাদেশের তৈরি টপস রফতানি হয়। তবে আমেরিকা ও ইউরোপে সবচেয়ে বেশি।
উনিশ শতকের শেষ দিক থেকেই টপ ও স্কার্ট হয়ে ওঠে কিশোরী-তরুণীদের আদর্শ পোশাক। ১৯০০-১৯১০ সাল থেকে সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি টপের স্টাইলেও আসতে শুরু হয় নানা পরিবর্তন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর কাট, নকশা, হাতার দৈর্ঘ্য, গলার ডিজাইন—সবকিছুতে এসেছে নানা পরিবর্তন। এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা নানা ডিজাইনের বাহারি টপস রফতানি করে কোটি কোটি টাকা আয় করতে শুরু করেছেন।
গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকের হাত ধরে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি এসেছে। খাতওয়ারি বিদায়ী অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি হয়েছে ১২২ কোটি ডলারের। অর্থাৎ ইপিবির তথ্য বলছে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয় করা এই খাতের চেয়ে বেশি রফতানি আয় হয়েছে টপ ও আন্ডারওয়্যার থেকে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে আন্ডারওয়্যার রফতানি করে বাংলাদেশ মোট আয় করেছে ২৩৭ কোটি ডলার। আর টপস রফতানি করে আয় হয়েছে ৩৬৫ কোটি ডলার।
যদিও দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি খাত হোম টেক্সটাইল সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ১১০ কোটি ডলার রফতানি করেছে। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রফতানি ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমেছে।
পণ্যের বৈচিত্র্য কম থাকা দেশের রফতানি খাতের অন্যতম বড় দুর্বলতা। এ দুর্বলতা কাটাতে কিছু নীতিসহায়তা দিচ্ছে সরকার। রফতানিতে নগদ সহায়তা ও আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যদিও বিদায়ী অর্থবছরে ট্রাউজার, টি-শার্ট ও নিটওয়্যার, সোয়েটার, শার্ট ও টপ এবং আন্ডারওয়্যার—হাতে গোনা এ পাঁচ পণ্য পাঠিয়েই বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার।
ইপিবি ও তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পোশাকের পাঁচ পণ্যের মধ্যে ট্রাউজার রফতানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ এ পণ্যটি রফতানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার। এ ছাড়া টি-শার্ট থেকে এসেছে ১ হাজার ৮৬ কোটি ডলার। এর বাইরে সোয়েটার রফতানি থেকে এসেছে ৫৯৪ কোটি ডলার।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শুধু টি-শার্টে ভর করেই অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী ভারত ও ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে টি-শার্ট রফতানি হয়েছিল ৬৬৫ কোটি ডলারের মতো। ২০২২ সালে হয় ৯৮৬ কোটি ডলারের। অর্থাৎ এ ছয় বছরের ব্যবধানে টি-শার্ট রফতানি বেড়েছে ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পণ্যের গুণগত মানের পাশাপাশি রয়েছে হোসিয়ারি ও নিটওয়্যার পণ্যের ঐতিহ্যগত দক্ষতা। সুলভ শ্রমের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে রফতানির অন্যতম প্রধান স্তম্ভে পরিণত হয়েছে তৈরি পোশাক খাতের টি-শার্ট পণ্য।