
সুন্দরবন ভ্রমণ করার আগে জেনে রাখুন
সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সময় বর্ষাকাল। বনের সবুজ সৌন্দর্য এই সময়টায় দেখা মেলে। নদীর পানিতে কমে যায় লবণাক্ততা। বর্ষার মিষ্টিপানির ছোঁয়ায় পশুপাখিরাও যেন মেতে ওঠে আনন্দে। এ কারণে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ রাখে বন বিভাগ। এই সময়ে নিজেকে বিকশিত করার সময় পায় সুন্দরবন। তিন মাস বন্ধ থাকার পর আবারও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন।
বনে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা। তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৭০০ টাকা। সুন্দরবনে বাঘ, হরিণ, বানর, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, অজগর ও বনমোরগ ছাড়াও রয়েছে ৩ শতাধিক প্রজাতির গাছ। আড়াই শতাধিক প্রজাতির পাখি। ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ। ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও ৩২ প্রজাতির চিংড়িসহ ২ শতাধিক প্রজাতির মাছ। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, শরণখোলা, ছালকাটা, টাইগার পয়েন্ট টাওয়ার, টাইগার পয়েন্ট সি-বিচ, জামতলা সি-বিচ, সাত নদীর মুখ, কালীরচর উল্লেখযোগ্য। ভ্রমণকালে সুপেয় পানি, প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স ও অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটর জরুরি। এছাড়া সুদক্ষ ও সশস্ত্র বন প্রহরী, ব্যবহারের কাপড়, কেডস্, শীতের সময় ব্লাঙ্কেট, রেডিও, ক্যামেরা থাকলে বেশি ভালো হয়।
যাঁরা সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য যা জানা প্রয়োজনঃ
- খুলনা, বাগেরহাটের মোংলা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়। দিনে দিনে সুন্দরবন দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে মোংলা থেকে করমজল অথবা হাড়বাড়িয়ায়, খুলনা থেকে কালাবগী অথবা শেখেরটেক এবং সাতক্ষীরা থেকে কলাগাছিয়া অথবা দোবেকী। তবে হাড়বাড়িয়া, শেখেরটেক ও দোবেকীতে যেতে হলে বন বিভাগের আলাদা অনুমতি নিয়ে যেতে হবে
- বাগেরহাটের মোংলা থেকে পশুর নদ হয়ে করমজল ও হাড়বাড়িয়া, খুলনা থেকে রূপসা-শিবসা নদী হয়ে কালাবাগী ও শেখেরটেক এবং সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ থেকে কলাকাছিয়া ও দোবেকীতে ট্রলার নিয়ে যাওয়া যায়। পর্যটকদের সুন্দরবন ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য বাগেরহাটের মোংলা, খুলনার চালনা ও সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় অনেক ট্রলার রয়েছে।
- ট্রলারে করে করমজল, কালাবগী ও কলাগাছিয়া পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে আসতে ট্রলারপ্রতি খরচ হবে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। হাড়বাড়িয়া, শেখের টেক ও দোবেকী যেতে খরচ হবে ৬ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতিটি ট্রলারে ২০ থেকে ৩০ জন পর্যন্ত যাওয়া যায়।
- সুন্দরবনে থাকতে হলে ট্যুর অপারেটরদের সাহায্য নিতে হবে। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সাধারণত তিন দিন দুই রাতের প্যাকেজ থাকে। তারাই আপনার ভ্রমণের অনুমতিসহ সবকিছুর দায়িত্ব নেবে।
- খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর। ঢাকাতেও মিলবে। প্যাকেজের আওতায় সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, জামতলা সমুদ্রসৈকত, দুবলারচর, হিরণ পয়েন্ট, মান্দারবাড়িয়া, বঙ্গবন্ধুর চর ঘুরে দেখা যায়।
- তিন দিনের প্যাকেজে খরচ পড়ে জনপ্রতি ৭ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লঞ্চে খরচ পড়বে ১৪ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
- কাঠের ট্রলারে করে খুলনা ও সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ থেকে রোমাঞ্চকর ভ্রমণের সুযোগ আছে। ওই ভ্রমণে খুব কাছ থেকে সুন্দরবন কে উপভোগ করার সুযোগ মিলবে। একটি ট্রলারে ১০ থেকে ১৫ জনের মতো থাকার সুবিধা রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ট্রলারে থাকবেন বনরক্ষী ও গাইড। সাধারণত পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পট ঘুরে দেখানো হয়। দুই রাত তিন দিনের এই ভ্রমণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ইচ্ছেমতো ঘোরার সুবিধা। জনপ্রতি খরচ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
- সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এ বছর থেকে বন বিভাগ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এ কারণে প্লাস্টিকের বোতল ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা যাবে না।
- সুন্দরবন ভ্রমণে বন বিভাগের অনুমতি পাওয়ার জন্য লাগে জাতীয় পরিচয়পত্র। কমপক্ষে ৫ দিন আগ থেকে ট্যুর অপারেটরগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
- সুন্দরবনে ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও বনে প্রবেশ করা যাবে না। কারও কাছে এ ধরনের জিনিস পাওয়া গেলে আইনগতভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বন বিভাগ। বনের পশুপাখিরা বিরক্ত হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না।