
চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও বাজারে দাম বাড়ছেই
চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ১০ সেপ্টেম্বর কৃষি সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে চালের দাম বাড়তে পারে। তাই আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হবে। গত ৮ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির এক সভায় দেশ থেকে সুগন্ধি চালসহ যে কোনো ধরনের চাল রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়।
ধানের দাম বাড়ার প্রভাবে চালের দাম বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা, চিকন চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে।
ঢাকার চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা ও বিআর ২৮ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে মান ও বাজার ভেদে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায়। মোটা চালের এ দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি। মিনিকেট চাল প্রতিকেজি বিক্রি ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় এবং নাজিরশাইল অন্তত ১ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ধানের দাম বৃদ্ধি, মজুদদারদের কারসাজি এবং বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি উল্লেখ করা হয়েছে। ধানের দাম বৃদ্ধি চালের দাম বাড়ার প্রধান কারণ। তবে মজুদদারদের কারসাজি এবং বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিও চালের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, সরকারের বাজার তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মিল ও আড়তে চালের দাম বাড়িয়েছেন। এ দাম খুচরা বাজারে আরও বেশি বেড়েছে। ভোক্তাদের দাবি, সরকার যদি বাজারের নিয়মিত তদারকি করে তাহলে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াতে পারবে না।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে চালের মজুদ বাড়বে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এটি কেবল একটি সাময়িক সমাধান। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাজার তদারকি জোরদার করা:
চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারের বাজার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়াতে বাধা দিতে সরকারকে নিয়মিত বাজার তদারকি করতে হবে।
ধানের দাম নিয়ন্ত্রণ:
চালের দাম ধানের দামের উপর নির্ভর করে। তাই ধানের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ধানের মজুদ নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে ধানের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
চাল আমদানির সুযোগ:
বাজারে চাহিদা বেশি থাকলে চালের দাম বাড়বে। তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চাল আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আমদানিকৃত চালের মান নিশ্চিত করতে হবে।
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে এবং ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।