
রপ্তানি আয়ে রেকর্ড
রেমিট্যান্সের পর পণ্য রপ্তানিতেও ইতিবাচকভাবে বছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। আর এই রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে।
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
জুন মাসেও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গত জুনে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে। জুন মাসে ৫৩১ কোটি ডলার বা ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
জুনে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ কম অর্জিত হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে আড়াই শতাংশ। গত বছরের এ সময়ে ৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
ডলার সংকট, আমদানিতে বাধা ও কলকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির অভাবে বিগত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি খাত প্রবৃদ্ধির মুখ দেখছিল না। মার্চে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, এপ্রিলে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে মে মাস থেকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে। সেই মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৬ শতাংশের বেশি। জুন মাসে তা অব্যাহত থেকেছে।
এ প্রবৃদ্ধির ফলে বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এক অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যদিও বিদায়ী অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সেই লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৪ কোটি ডলার।
ডলার সংকট নিয়ে বছরখানেক ধরেই দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। আর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মূল দুই উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুটি উৎস থেকেই গত বছরের শেষ দিকে বৈদেশিক মুদ্রা আসা কিছুটা কমে যায়। অবশ্য পরে তা ঘুরে দাঁড়ায়।
বিদায়ী অর্থবছর শেষে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছিল ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।
ইপিবি’র প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য ও চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে।
রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই পোশাক খাতে
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়. বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। আর ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বেশি আয় হয়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে। আর এই খাতের ওপর ভর করেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
বিদায়ী অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার বেশি আয় হয়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ।
অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে দেশে এসেছে ২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। আর এই রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, জুন মাসে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত তিন বছরে সর্বোচ্চ।
তিন বছর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২ দশমিক ৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ওই অর্থবছরের মে মাসে, ২১৭ কোটি ১০ লাখ (২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন) ডলার। সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে এর চেয়েও বেশি অর্থ ২২০ কোটি (২ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সে হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন বছর পর এক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে জুনে।
ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশু কেনাসহ পরিবার-পরিজনের অন্যান্য খরচ মেটাতে বেশি অর্থ পাঠানোয় রেমিট্যান্সে এই উল্লম্ফন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
সব মিলিয়ে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি (২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার।